শিক্ষাই আলোর পথ, জ্ঞানে গড়ি সুন্দর ভবিষ্যৎ।
  • |

Khurshed Ellinor Bidya Niketon

খুর্শেদ এলিনর বিদ্যানিকেতন

স্থাপিতঃ ১৯৯৪ খ্রি.
প্রতিষ্ঠাতা

আলহাজ্ব খুর্শেদ উদ্দিন ভূঁইয়া 

জন্ম ও শৈশব : আলহাজ্ব খুর্শেদ উদ্দিন ভূঁইয়া ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলাধীন মুশুলি ইউনিয়নের চংভাদেরা গ্রামে ১৯৩০ সালের পহেলা মার্চ  এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন।উনার পিতার নাম মৃত আলী হোসেন ভূঁইয়া এবং মাতা আয়েশা ভানু। উনি পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে ছিলেন চতুর্থ। ছোটবেলা থেকে উনি ছিলেন খুবই মেধাবী এবং শান্ত প্রকৃতির। 

শিক্ষা জীবন : উনার লেখাপড়ার সূচনা ঘটে নিজ বাড়িতে।  পরবর্তীতে পার্শ্ববর্তী গ্রামে কার্তিখিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে  পঞ্চম শ্রেণীতে ১ম স্থান অধিকার এবং মেধা বৃত্তি অর্জন করেন। পঞ্চম শ্রেণীর পাঠ শেষে উনি ভর্তি হন কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে তিনি মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন ফার্স্ট ডিভিশনে। তারপর তিনি গুরুলদয়াল সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সেকেন্ড ডিভিশনে উত্তীর্ণ হন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (অনার্স)   দ্বিতীয় ক্লাসে উত্তীর্ণ হন। 

কর্মজীবন : উনি কর্মজীবন শুরু করেন পাকিস্তানের রাওল পিন্ডিতের সচিবালয় চাকরির মাধ্যমে। কয়েক বছর চাকরি করার পর বিলেতে/ লন্ডনে যান।তারপর তিনি লন্ডন থেকে  ডেনমার্কে গমন করেন এবং ১৯৮৭ সালের প্রথম দিক পর্যন্ত চাকরি করেন। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর ১৯৮৭ সালের   জুলাই মাসের দিকে মাতৃভূমির টানে বাংলাদেশে আগমন করেন। 

বৈবাহিক জীবন : লন্ডন চাকরি কালীন সময়ে ডেনমার্কের নাগরিক রুথ এলিনর ভূঁইয়াকে বিবাহ করেন। 

সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ :তিনি  মাতৃভূমি ও নিজ গ্রামকে অত্যন্ত ভালবাসতেন। এরই ধারাবাহিকতায় নিজ গ্রামের উন্নয়নে মনোযোগী হয়ে উঠেন। চংভাদেরা গ্রামটি ছিল অজপাড়া গ্রাম এবং নান্দাইল উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল । এখানে কোন বাজার কিংবা কোন রাস্তাঘাট ছিল না। ১৯৯২ সালে চংভাদেরা গ্রামে লায়লা বাজার স্থাপন করেন এবং এলাকার উন্নয়নে বাজারের মধ্যে তাঁত শিল্প প্রতিষ্ঠা করেন। লায়লা বাজারে তিনি পোস্ট অফিস স্থাপন করেন। তারপর তিনি ১৯৯৩ সালে লায়লা বাজার থেকে মেরঙ্গা পর্যন্ত ২৭ টি কালভার্ট সহ একটি রাস্তা স্থাপন করেন। চংভাদেরা গ্রামে আশেপাশে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। আশেপাশের গ্রামগুলো ছিল লেখাপড়া হীন। তাদের অবস্থার উপর নির্ভর করে ১৯৯৪সালে তিনি স্থাপন করেন খুর্শেদ এলিনর বিদ্যানিকেতন যা আজ নান্দাইল উপজেলার একটি শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানের একটি । এই বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান, মানবিক এবং ব্যবসা শিক্ষার মাধ্যমে হাজার হাজার শিক্ষার্থী জ্ঞান অর্জন করছে।  মাধ্যমিক শিক্ষার পাশাপাশি তিনি স্থাপন করেন শাহীন আফরোজ প্রিপেরাটরি স্কুল। সেখানে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করতে পারে। এলাকাবাসী ও ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে লায়লা বাজারের নদীর উপর উনার আপ্রাণ চেষ্টায় সরকারি উদ্যোগে একটি ব্রিজ নির্মাণ হয়। নান্দাইল উপজেলার কালীগঞ্জ বাজারে অগ্রণী ব্যাংক স্থাপনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।  উনার প্রবল ইচ্ছা ছিল লায়লা বাজারে মসজিদ স্থাপন করা। এজন্য তিনি লায়লা বাজারের সাথেই জায়গা ক্রয় করে মসজিদে দান করেন যা পরবর্তীতে তার সন্তানেরা উক্ত মসজিদ নির্মাণ করেন। তিনি খুর্শেদ এলিনর বিদ্যানিকেতনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে যান।  তিনি ছিলেন খুবই উদার মনের মানুষ। তিনি সবসময় এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যেতেন। । তার নিজ অর্থায়নে খুর্শেদ  এলিনর বিদ্যানিকেতনে দ্বিতল ভবন নির্মাণ করেন এবং এই বিদ্যালয় ১৪৫ শতক জমি দান করেন। 

মৃত্যু : ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে ২৬ শে জানুয়ারি ইন্তেকাল করেন। উনার ৮৫ বছর জীবন কর্মময় ও বহু গুণে গুণাম্বিত। মৃত্যুকালে এক ছেলে দুই মেয়ে ও এক স্ত্রীসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী ও আত্মীয়-স্বজন রেখে যান।